আজ
|| ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ || ২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ || ১৫ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি
৮৩ বছর ধরে ফেনীতে আলো ছড়াচ্ছে যে মাদ্রাসা
প্রকাশের তারিখঃ ৬ ডিসেম্বর, ২০২৫
ফেনীর ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ জামেয়া দারুল উলুম শর্শদিতে প্রথমবারের মতো দস্তারবন্দী মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ৮৩ বছর ধরে ফেনীতে আলো ছড়াচ্ছে এ মাদ্রাসা।
আগামী ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর, শুক্র ও শনিবার দুই দিনব্যাপী এই মহাসম্মেলনের প্রস্তুতিতে পুরো মাদ্রাসা ক্যাম্পাসজুড়ে এখন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। প্রাক্তন ছাত্র ও শুভানুধ্যায়ীদের মাঝেও ব্যতিক্রমী উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে।
সম্মেলনে দেশের খ্যাতনামা উলামায়ে কেরাম অংশ নেবেন। এতে গত আঠারো বছরে দাওরায়ে হাদীস সম্পন্ন করা প্রায় পাঁচ শত শিক্ষার্থীকে পাগড়ি পরিয়ে দস্তারে ফজিলত প্রদান করা হবে।
মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষা সচিব মাওলানা সালমান হায়দার জানান যে প্রথম দিনের আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শায়খুল হাদীস আল্লামা শেখ আহমাদ (হাটহাজারী মাদ্রাসা), মুফতি নুরুল হক (পীর সাহেব বটগ্রাম), শাইখ আব্দুল গাফফার হাফিজাহুল্লাহ (জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া, মুহাম্মাদপুর) এবং মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী (হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ)।
দ্বিতীয় দিনে বয়ান করবেন মাওলানা আব্দুল হামিদ পীর সাহেব মধুপুর, আল্লামা মুফতি দিলাওয়ার হোসাইন (মসজিদে আকবর কমপ্লেক্স), মুফতি কেফায়েতুল্লাহ (হাটহাজারী মাদ্রাসা), মুফতি মুস্তাকুন্নবী (কুমিল্লা) এবং ডক্টর নুরুল আবসার আজহারী (হাটহাজারী মাদ্রাসা)। এই দিনেই অনুষ্ঠিত হবে দস্তারে ফজিলত প্রদানের প্রধান পর্ব। শাইখ জসিমউদ্দীন (হাটহাজারী) জোহরের পর ফারেগীনদের জন্য বিশেষ নসিহা প্রদান করবেন।
সম্মেলন উপলক্ষে জামিয়ার প্রকাশনা বিভাগ পাঁচজন প্রয়াত মনীষীর জীবন স্মরণিকা প্রকাশ করছে। পাশাপাশি আল্লামা আব্দুল আজিজ রহ. এর স্বতন্ত্র জীবনীগ্রন্থও প্রকাশিত হবে বলে জানা গেছে।
ফেনীর বুকে প্রাচীনতম কওমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে দারুল উলুম শর্শদির প্রতিষ্ঠা ১৯৪৩ সালে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ৮৩ বছর ধরে মাদ্রাসাটি ইসলামী শিক্ষা, আচার-সংস্কৃতি ও ধর্মীয় মূল্যবোধের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এটিকে কেন্দ্র করেই ফেনী, নোয়াখালী ও কুমিল্লা অঞ্চলে শত শত মাদ্রাসা ও মসজিদের বিস্তার ঘটে।
মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা করেন শাইখ শাহ সুফি নূর বখশ রাহিমাহুল্লাহ, যিনি আল্লামা আশরাফ আলী থানবীর খলিফা এবং বাংলাদেশের অন্যতম সুফি সম্রাট হিসেবে পরিচিত। তার ইন্তেকালের পর দায়িত্ব পালন করেন শাইখ শহীদ নুর নজির রহ., আল হাফেজ রশীদ আহমাদ রহ., মাওলানা নুরুল ইসলাম এনায়েতপুরী রহ. এবং পুনরায় আল হাফেজ রশীদ আহমাদ রহ.।
বর্তমানে মাদ্রাসার সদরে মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দেশের প্রথিতযশা আলেমে দ্বীন, শায়খুল হাদীস আফজালুর রহমান। তিনি দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে মাদ্রাসার খেদমতে নিয়োজিত আছেন। পাশাপাশি ২০২৩ সাল থেকে নিয়মিত মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মাওলানা ইসমাঈল হায়দার। বর্তমানে নুরানী, হিফজ, কিতাব, তাকমিল ও ইফতা বিভাগে প্রায় এক হাজার ছাত্র অধ্যয়নরত।
ঐতিহাসিক শর্শদি গ্রামটির গুরুত্বও অনস্বীকার্য। ইতিহাসবিদদের মতে এটি ছিল বাংলার সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহের দ্বিতীয় রাজধানী। তাঁর নির্মিত চার দিঘি ও অন্যান্য স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ এখনো অতীতের স্মৃতি তুলে ধরে।
এখানেই অবস্থিত মোঘল আমলের পাঁচ শত বছরের পুরনো বীর মুজাহিদ মোহাম্মদ আলী চৌধুরী মসজিদ, যা দারুল উলুম শর্শদির ঐতিহ্যের ধারক ও সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
সুত্র; সময় নিউজ
Copyright © 2025 আজকের মেইল. All rights reserved.