দলীয় নেতাকর্মীদের বিপদে ফেলে ভারতে পালিয়ে যায় ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা। তার এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের মতো গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতাও বিদেশে নিরাপদ আশ্রয়ে বিলাসবহুল জীবন কাটাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে গিয়েও দেশে আত্মগোপনে থাকা কর্মীদের শান্তিতে থাকতে দিচ্ছে না ফুর্তিবাজ এসব শীর্ষ নেতা। তারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি না নিয়ে লোভে ফেলে কর্মীদের বিপদে ঠেলে দিচ্ছেন। প্রতিনিয়ত উসকানি দিচ্ছেন মাঠে নামার।
খুনি হাসিনার নির্দেশে মিছিলের নামে মাঠে নামতে গিয়ে এখন নতুন করে বিপাকে পড়েছেন এতদিন ধরা ছোয়ার বাইরে থাকা হাজার হাজার নেতাকর্মী। সারা দেশে গ্রেফতার হয়েছেন অনেক নেতাকর্মী। বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনার উসকানির কারণে নতুন করে বিপাকে পড়ছে নেতাকর্মীরা।
ভারতের ইন্ধনে ক্ষমতায় ফেরার লোভ দেখিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য দলীয় সন্ত্রাসীদের সহিংসতায় ঠেলে দিচ্ছে দিল্লির সেবাদাসী হাসিনা। গত কিছুদিন ধরেই ঝটিকা মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী নেতাকর্মীদের। এসময় জনতা ও পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছেন আওয়ামী লীগের বহু সন্ত্রাসী।
সাড়ে ১৫ বছরের অপশাসন, গুমখুন, দুর্নীতি, লুটপাট এবং অর্থ পাচারের জন্য আওয়ামী লীগ অনুতপ্ত নয়, বরং দলটি নিজেদের অপশাসনকে মহিমান্বিত করার চেষ্টা করছে। পাশাপাশ বিদেশে পালাতে না পেরে দেশে আত্মগোপনে থাকা নেতাকর্মীদের ভুল বুঝানো হচ্ছে, মানুষ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি ক্ষুব্ধ। মাঠে নামতে পারলেই তারা পাশে দাঁড়াবে। কখনও পদ-পদবী ও অর্থের লোভ দেখিয়ে মাঠে নামানো হচ্ছে দলীয় ক্যাডারদের। এই ফাঁদে পা দিয়ে মাঠে নেমে জনরোষের শিকার হচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা। কোথাও কোথাও গণপিটুনির শিকার হচ্ছে তারা।
আজ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা করায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে গণপিটুনি দিয়েছে উপস্থিত জনতা। পরে ঘটনাস্থল থেকে আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যায়, কয়েকজন ব্যক্তি ঝটিকা মিছিলের চেষ্টা চালালে তাদের ঘিরে ধরে পিটুনি দিচ্ছে জনতা। পরে তাদের মধ্যে আটক দুজনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
গত শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলামোটর জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অফিসের সামনে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের কয়েক নেতাকর্মী ও অনুসারী জড়ো হয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করে এবং বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের দিকে অগ্রসর হয়।মিছিলের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরও সন্ধ্যায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলামোটর-গুলশান এলাকায় ঝটিকা মিছিলের প্রস্তুতির সময় ১২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এরআগে ১০ সেপ্টেম্বর বন্দর নগরী চট্টগ্রামে মাস্ক পরে ঝটিকা মিছিল করেছে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ৩০ সেকেন্ডের মতো মিছিল করে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। গত ২ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বনানীতে ভোরে নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কয়েকজন ঝটিকা মিছিল করে। মিছিলের ব্যানারে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে স্লোগান ছিল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শেখ হাসিনা এবং তার দলের নেতারা ভারতসহ বিভিন্ন দেশে সেফ হোমে আরাম আয়েশেই আছেন। তাদের হাতে টাকাপয়সারও অভাব নেই। নিজেদের সুখের জীবন নিশ্চিত করে বিদেশে থেকেই দেশে থাকা নেতাকর্মীদের নতুন করে উসকানি দিচ্ছেন। নেতাকর্মীরা যাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ফের রাস্তায় নামেন, তাদের ক্ষমতায় ফিরে আসার পথ তৈরি করে দেন-এমন নির্দেশনা দিচ্ছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হচ্ছে, একজন দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি কিংবা একটি দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা পরিবারের জন্য তারা কেন নিজেদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলবেন।
আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র জানায়,শেখ হাসিনার বক্তব্যে সাধারণ নেতাকর্মীরা অনেকেই আবেগপ্রবণ হয়ে মাঠে নামেন। মিছিল করে তার ছবি এবং ভিডিও পাঠায় হাইকমান্ডের কাছে। সেগুলো আওয়ামী লীগ তাদের দলের ভেরিফাইড ফেসবুক পেজে আপলোড দেওয়া হয়। এভাবে তারা দলের নেতাকর্মীদের উৎসাহিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। খুনি হাসিনার নজরে আসতে গিয়ে বিপদে পড়ছেন কর্মীরা।